অপেক্ষা নিয়ে কবিতা, ভালোবাসার অপেক্ষা কবিতা
অপেক্ষা বলতে মূলত কোন কিছুর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রহর গুনাকে বোঝায় থাকে। অপেক্ষা মানুষের জীবনের একটি অন্যতম গুন যার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। মানুষের জীবনে অপেক্ষার ফল সর্বদা মঙ্গলজনক হয়। তাইতো পৃথিবীর প্রতিটি জ্ঞানী মানুষ নিজের জীবনে ভালো কিছু অর্জন করার জন্য অপেক্ষা করেছেন। অনেক কবি ও সাহিত্যিক প্রতিটি মানুষের মাঝে অপেক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য তাদের জীবনীতে বেশ কিছু অপেক্ষা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। যে কবিতা গুলোর মাধ্যমে আমরা অপেক্ষা গুরুত্ব জানতে পারি এবং এই কবিতাগুলো আমাদেরকে অপেক্ষা করতে উৎসাহ প্রদান করে। আমাদের ওয়েবসাইটে আজকে আমরা আপনাদের মাঝে সেই রকমই অপেক্ষা নিয়ে কবিতাগুলো তুলে ধরব। আপনি আজকের এই অপেক্ষা নিয়ে কবিতা গুলোর মাধ্যমে আপনার বাস্তব জীবনে অপেক্ষা বিষয়টি জানতে পারবেন।
অপেক্ষা বলতে মূলত কোনো একটি জিনিসের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে সময় গুনতে থাকার অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকে। অপেক্ষা কারণে মূলত মানুষ জীবনে কোন কিছু লাভ করতে পারে। মূলত পৃথিবীতে যে ব্যক্তি জীবনে সফলতা লাভ করেছেন এবং ভালো কিছু অর্জন করেছেন তারাই মূলত জীবনে অধির আগ্রহ নিয়ে কোন কিছু অপেক্ষা করেছেন এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছেন। মানুষের জীবনে অপেক্ষার ফল সর্বদা মিষ্টি হয়ে থাকে। তাই তো বাস্তব জীবনে প্রতিটি মানুষকে জ্ঞানী গুণীজন অপেক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন যেগুলো বাস্তব জীবনে মানুষকে অপেক্ষা করতে সাহায্য করে। অনেক কবি তাদের কবিতায় অপেক্ষা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য তুলে ধরেছেন যেগুলো মানুষকে অপেক্ষার বিষয়ে জানতে সাহায্য করে থাকে। বাস্তব জীবনে একজন মানুষ অপেক্ষা নিয়ে এই কবিতাগুলো ও জ্ঞানী গুণীজনদের অপেক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণী গুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে মূলত অপেক্ষা সম্পর্কে জানতে পারে।
অপেক্ষা নিয়ে কবিতা
অনেকেই জীবনে অপেক্ষার গুণটি আয়ত্ত করার জন্য অনলাইনে অপেক্ষা নিয়ে কবিতাগুলো খুঁজে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে আজকে নিয়ে এসেছি আমরা অপেক্ষা নিয়ে কবিতা সম্পর্কিত একটি পোস্ট যেখানে আমরা আপনাদের মাঝে অপেক্ষা নিয়ে বেশ কিছু কবিতা তুলে ধরব। আপনারা আমাদের আজকের এই অপেক্ষা নিয়ে কবিতাগুলোর মাধ্যমে কবির ভাষায় অপেক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আপনি আপনার জীবনে ভালো কিছুর জন্য সুন্দর ভাবে অপেক্ষা করতে পারবেন। কেননা এই কবিতায় প্রতিটি কবি অপেক্ষা গুরুত্ব সকলের মাঝে কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তাইতো প্রতিটি মানুষ জীবনে এই অপেক্ষা নিয়ে কবিতাগুলো অনুশীলন করে থাকেন। নিচে অপেক্ষা নিয়ে কবিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. কবিতা ঃ অপেক্ষার শেকড়
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে
আমার পায়ে শেকড় গজিয়েছে —
আমি আর কত অপেক্ষা করবো!
স্মৃতির পরাগ চোখের মণিকে
ঘোলাটে করে রাখে ;
তুমি আসবে বলে উৎসুক হৃদয়
আজও পথ চেয়ে থাকে।
তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে
দীর্ঘ সবুজ পৃথিবী
আজ বার্ধ্যক বরণ করেছে ,
কেবল তোমার অপেক্ষায়
ঝরা ফুলে ভরে গেছে উঠোন।
আর কত অপেক্ষা করবো!
আর কত!!!
সেই তো এলে ;
শুধু এলে অবেলায়,
চোখে মোটা চশমা আমার,
দৃষ্টি শক্তি ভীষণ ভাবে লোপ পেয়েছে
তবুও ঐ মুখখানি ঠিক আমি চিনেছি ;
সাদা মেঘেদের দলে ভেসে চলা
দু একটা কালো মেঘের মত
তোমার মাথার সাদা চুল গুলোর ভেতর
একটা দুটা কালো চুল
মাথা চাঁড়া দিয়ে যেনো বলছে ,
দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী পর তুমি এলে।
সবসময় লেপে থাকা
মাটির ঘরের মত দেহে,
আজ সময়ের খরতাপে
ভাদ্রের ফাটলের মত
বলিরেখার বিচরণ ;
দুর থেকেও সুস্পষ্ট।
যৌবন দীপ্ত সেই অহমিকা
আর নেই!
সেই তো এলে ;
শুধু এলে অবেলায়।
তোমাকে দু’হাতে একটু ছুঁয়ে দেখবো
তেমন নড়াচড়া টুকুও
করতে পারি না!
তোমার অপেক্ষায়
শরীরে আজ শেকড় গজিয়েছে।
আজ আমার দেহ মাটির প্রেমে মত্ত,
খুব শীঘ্রই হয়তো আমি — মাটি এক হবো !
সেই তো এলে;
শুধু এলে অবেলায়।
২.অপেক্ষা নিয়ে কবিতা ভালো নেই তুমি ছাড়া
কবিতা ঃ ভালো নেই তুমি ছাড়া
আর কতগুলো দিন
অপেক্ষা করতে হবে
বলতে পারো?
অনেকগুলো দিন হলো
তোমার কন্ঠস্বর শুনি না!
অনেকটা সময় হলো স্বীয় হৃদয়ে
প্রেম অনুভব করি না!
তোমার এই হঠাৎ করে চলে যাওয়া,
মোবাইলে কথা না বলা—
আমার মাঝে প্রশ্নের এলোমেলো পাহাড়
দাঁড় করে রেখেছে।
সেই সব প্রশ্নের কোন উত্তর
খুঁজে পাই না।
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি বোধহয়
নতুন কাউকে পেয়েছো —
মিথ্যা কথার ফুলঝুরিতে
দূরে সরে গিয়েছো;
আবার ভাবি হয়তো তুমি
পরীক্ষা করছো আমায় —
তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি কি-না,
তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারি কি-না!
আসলে কি জানো,
প্রিয় মানুষটির অনুপস্থিতিতে
কেউ মরে যায় না!
হ্যাঁ অনেকটাই ফুরিয়ে যায় স্বপ্ন, প্রেম, বিশ্বাস;
অনেকটাই ফুরিয়ে যায় —
বেঁচে থাকার আশ।
তেমনি তোমাকে হারিয়ে আমিও
নিথর দেহে পাথর হয়ে উঠেছি!
বেঁচে আছি — ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে,
পানি স্বল্পতায় বৃক্ষ যেমন
ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসে কিন্তু বেঁচে থাকে —
ঠিক তেমনি বেঁচে আছি আমি।
শুনতে কি পাচ্ছো…. রেখা..?
তোমাকেই বলছি ,
তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই আমি।
৩.অপেক্ষা নিয়ে কবিতা উদ্ভ্রান্ত ভাবনা
কবিতা– উদ্ভ্রান্ত ভাবনা
তুমি আসবে বলে,
এক জীবনের সমস্ত অপেক্ষা আমার ;
একান্তই আমার।
এক পৃথিবীর সব ক’টা ফাগুন জড়ো করে
ফুলদানির কোলাজে সাজিয়ে রেখেছি।
তুমি আসবে, তুমি আসবে!
অপেক্ষা কেবল অপেক্ষা আমার।
ঐ আকাশ রঙের শাড়ি আর খোঁপায়
দুধ-সাদা রঙের শিউলি পরে,
লাল টুকটুকে সূর্যটাকে কপালে বসিয়ে
মিষ্টি মৃদু হাসি মেখে তুমি আসবে।
জানি তুমি আসবে, তুমি আসবে
অপেক্ষা কেবল অপেক্ষা আমার।
মহাশূন্যের শূন্যতাকে পাত্র বানিয়ে
“এক স্বর্গ ভুবন ” ভালোবাসায় তা পূর্ণ করে
আমাকে নিবেদন করবে প্রেম।
অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
তুমি আসবে নাকি সমস্ত ভাবনা উদ্ভ্রান্ত হবে?
অপেক্ষা কেবল অপেক্ষাই রবে?
৪.অপেক্ষা নিয়ে কবিতা তিনটে কদম ফুল ও অপেক্ষা
কবিতা -তিনটে কদম ফুল ও অপেক্ষা
অতঃপর — তারা কথা বলতে বলতে
একে-অপরের হৃদয়ের কাছে চলে আসে ;
এই কাছে আসার নাম হয়ে ওঠে “ভালোবাসা” ।
ছেলেটি মেয়েটির চোখে
নক্ষত্রের ফুল দেখতে পেতো,
দেখতে পেতো গোলাপ রঙা ঠোঁটে ঝুলে থাকে
একগুচ্ছ জ্যোৎস্না।
মেয়েটি ছেলেটির বুকে সাগর সাজাতো,
আকাশ বানাতো ;
ডুব সাঁতার খেলতো,
কখনও আবার পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতো।
ছেলেটিকে পাহাড় করে বুকের মাঝ বরাবর
ঝরনা হয়ে বয়ে যেতো মেয়েটি।
তারা ঠিক করলো দেখা করবে!
সেদিন ঝুম-বৃষ্টির দিন ছিল,
তিনটে কদম ফুল হাতে ছেলেটি অপেক্ষা আঁকছিল,
রাজু ভাস্কর্যের গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সময়ের নিঃশ্বাসে ফাগুন রঙা স্বপ্নের আনাগোনা বাড়ছিল।
মেয়েটিও ব্যস্ততার কোলাহলে ঠেলে
শহরের দিকে এগুচ্ছিল,
দুধ শাদা জমিন মাখা নীল পারের শাড়িতে
অসম্ভব সুন্দর কাব্য গেঁথেছিল মেয়েটি।
” রাগ করো না ” আমি প্রায় চলে এসেছি —
শিরোনামে মুঠোফোন বারবার বেজেই চলছিল।
আর কিছুটা সময়!
হয়তো এক মিনিটেরও কম সময় ;
হয়ে উঠে পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতিক্ষার উপন্যাস।
ছেলেটি আজও হাজার কাজের ভীড়ে ছুঁটে যায়
সেই অপেক্ষারত সময়ের কাছে ;
ভাবে —
মেয়েটি যদি আসে!
আমরা জানি না মেয়েটির কি হয়েছিল।
শুধু জানি,
ছেলেটির চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া
কান্নার নাম — “নীলিমা”
৫. অপেক্ষা নিয়ে কবিতা “অপেক্ষা একটি সবুজ বাতির”
কবিতা
“অপেক্ষা একটি সবুজ বাতির”
তাঁর ঘরে সবুজ বাতি জ্বলে না আজ দুই দিন
আমি অপেক্ষা করছি
তাঁর অপেক্ষা
সবুজ বাতির অপেক্ষা।
সবুজ বাতি জ্বললে
আচমকাই আমার ঠোঁট হেসে উঠে।
বুঝতে পারি তার আগমন।
আমার ভেতরের পরিবর্তন
আমি ছাড়া কেউ জানে না,
আমি অপেক্ষা করি
তাঁর অপেক্ষা
একটা নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা।
সে জানে না আমার অপেক্ষার কথা।
সবুজ বাতি নিভে গেলে
আকাশটা মেঘলা থাকে
বাড়ে ব্যাকুলতা
সে জানে না আমার ব্যাকুলতা।
আমি দুর হতে অপেক্ষা করি
দেখি সবুজ বাতি
দেখি তাঁর আসা যাওয়া।
অপেক্ষা করি কখন জ্বলবে সবুজ বাতি।
আসমা খানম শিউলি
৬. অপেক্ষা নিয়ে কবিতা অপেক্ষায় থাকেনি
কবিতা ঃ অপেক্ষায় থাকেনি
তুমি অপেক্ষায় থেকো,
আমি অবশ্যই ফিরবো ;
সবুজ ছায়ার সীমানায়
গৈরিক আলো নিয়ে ফিরবো–
নীলাভ সমুদ্রের বুকে
লাল সূর্য নিয়ে ফিরবো।
তুমি অপেক্ষায় থেকো,
আমি অবশ্যই ফিরবো।
মার্চের কালোরাত্রির
উপযুক্ত জবাব দিয়ে ফিরবো–
বীরাঙ্গনাদের নির্বাক কন্ঠতন্ত্রির
স্ব- বাক কন্ঠস্বর নিয়ে ফিরবো;
বাতাসে বারুদের গন্ধ ধুয়ে দিয়ে —
কান্নার ভয়াল আর্তনাদ মুছে ;
হাসি নিয়ে ফিরবো।
তুমি অপেক্ষায় থেকো ;
আমি অবশ্যই ফিরবো।
মুক্তির গান শেষে ;
আমি স্বাধীনতা নিয়ে ফিরেছি —
হাসি নিয়ে ফিরেছি, প্রেম নিয়ে ফিরেছি!
হে নারী —
তোমায় আমি স্বাধীন ভূ-খন্ড এনে দিয়েছি ;
তুমি আমায় স্বাধীন ভালোবাসা দিতে পারো নি!
তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করোনি।