নজরুলের প্রেমের কবিতা| সর্বশ্রেষ্ঠ কাজী নজরুল ইসলাম এর প্রেমের কবিতা
বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম পরিচিত। তিনি ১৮৯৯ সালে ২৪ পরগনার আসানসোল মহাকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে নিজের ছেলেবেলা পার করেছেন। তিনি কখনো লেটোর দলে যোগ দিয়েছেন আবার কখনো রুটির দোকানে কাজ করতেন। আবার ১৭ বছর বয়সে তিনি সেনাবাহিনীর পল্টনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনে অসংখ্য কবিতা ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো এখনো প্রতিটি মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে আছে। তাইতো ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা গুলো অনুসরণ করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে আজকে আমরা নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো তুলে ধরেছি। আপনি এই প্রেম সংক্রান্ত কবিতা গুলোর মাধ্যমে প্রেম সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। এই কবিতাগুলোর মাধ্যমে আপনি প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারবেন।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনে অসংখ্য কবিতা ছোট গল্প নাটক রচনা করেছেন। প্রতিটি কবিতার মাঝে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার বিষয় সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় এবং এগুলো সুন্দরভাবে একটি বিষয় সম্পর্কে প্রতিটি মানুষকে জানতে সাহায্য করে। কবি মূলত প্রতিটি কবিতায় নিজের ব্যক্তিগত জীবনের আবেগ অনুভূতি এবং বিভিন্ন ধরনের চিন্তাশক্তি এছাড়া মানুষের বাস্তব জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিষয় তুলে ধরেছেন যেগুলো আমাদেরকে বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনুপ্রেরণা দান করে থাকে। নজরুল ইসলাম প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের কথা চিন্তা করে অসংখ্য প্রেমের কবিতা লিখেছেন। যে কবিতাগুলো প্রতিটি মানুষকে প্রেম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং প্রেমের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে কবিতাগুলোর জুড়ি মেলা ভার। ব্যক্তিগত জীবনে কবিতা গুলো প্রতিটি মানুষকে তাদের প্রিয় মানুষের প্রতি প্রেমের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
নজরুলের প্রেমের কবিতা
কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রেমের কবিতা। প্রেমের কবিতা গুলোতে ব্যক্তিগত জীবনের প্রেমের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতিগুলো শেয়ার করেছেন। তাইতো ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো অনুসন্ধান করে থাকেন। আমরা আজকে আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের জন্যই নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকের এই নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো আপনি ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতেই ব্যবহার করতে পারবেন। সকলের মাঝে নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা গুলো শেয়ার করে দিয়ে তাদেরকে কবির ভাষায় প্রেম বিষয়কে জানাতে পারবেন। এছাড়া আপনি আজকের এই নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারবেন। নিচে নজরুলের প্রেমের কবিতা গুলো তুলে ধরা হলো:
অকরুণ পিয়া
আমার পিয়াল বনের শ্যামল পিয়ার ওই বাজে গো বিদায়বাঁশি,
পথ-ঘুরানো সুর হেনে সে আবার হাসে নিদয় হাসি।
পথিক বলে পথের গেহ
বিলিয়েছিল একটু স্নেহ,
তাই দেখে তার ঈর্ষাভরা কান্নাতে চোখ গেল ভাসি।
তখন মোদের কিশোর বয়স যেদিন হঠাৎ টুটল বাঁধন,
সেই হতে কার বিদায়-বেণুর জগৎ জুড়ে শুনছি কাঁদন।
সেই কিশোরীর হারা মায়া
ভুবন ভরে নিল কায়া,
দুলে আজও তারই ছায়া আমার সকল পথে আসি।
আমার কালো মেয়ে
আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে
কে দিয়েছে গালি
তারে কে দিয়েছে গালি
রাগ করে সে সারা গায়ে
মেখেছে তাই কালি।
যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে
আরো মধুর লাগে তাহার হাসিমুখের চেয়ে
কে কালো দেউল করে আলো
অনুরাগের প্রদীপ জ্বালি।
পরেনি সে বসনভূষণ, বাঁধেনি সে কেশ
তারি কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ।
রাগিয়ে তারে কাঁদি যখন দুখে
দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে
আমার রাগী মেয়ে, তাই তারে দিই
জবা ফুলের ডালি।।
আমার কোন কুলে আজ
আমার কোন কুলে আজ ভিড়লো তরী
এ কোন সোনার গাঁয়?
আমার ভাটির তরী আবার কেন
উজান যেতে চায়?
দুখেরে কান্ডারী করি
আমি ভাসিয়েছিলাম ভাঙ্গা তরী
তুমি ডাক দিলে কি স্বপন পরী
নয়ন ইশারায় গো?
নিভিয়ে দিয়ে ঘরের বাতি
ডেকেছিলে ঝড়ের রাতি
কে এলে মোর সুরের সাথি
গানের কিনারায়?
সোনার দেশের সোনার মেয়ে
ওগো হবে কি মোর তরীর নেয়ে
এবার ভাঙ্গা তরী চল বেয়ে
রাঙা অলকায়।।
আমি যার নূপুরের ছন্দ
আমি যার নূপুরের ছন্দ, বেণুকার সুর
কে সেই সুন্দর, কে?
আমি যার বিলাস যমুনা, বিরহ বিধুর
কে সেই সুন্দর, কে?
যাহার গলে আমি বনমালা
আমি যার কথার কুসুমডালা
না দেখা সুদূর
কে সেই সুন্দর, কে?
যার শিখীপাখা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায়?
আমি যার বরষার আনন্দ কেকা
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনীরেখা
যে মম অঙ্গের কাঁকন-কেয়ূর
কে সেই সুন্দর, কে?
আপন – পিয়াসী।
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়,
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি তিয়াসী বাসনায়।।
আমারই মনের তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।।
আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলি-উজল অভিরাম।।
আমারই রচিত কাননে বসিয়া
পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া,
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া,
আপনারি গলে দোলে হায়।।
বেদনা-মণি
একটি শুধু বেদনা মানিক আমার মনের মণিকোঠায়
সেই তো আমার বিজন ঘরে দুঃখ রাতের আঁধার টুটায়।
সেই মানিকের রক্ত-আলো
ভুলাল মোর মন ভুলাল গো।
সেই মানিকের করুণ কিরণ আমার বুকে মুখে লুটায়।
আজ রিক্ত আমি কান্না হাসির দাবি দাওয়ার বাঁধন ছিঁড়ে
ওই বেদনা-মণির শিখার মায়াই রইল একা জীবন ঘিরে।
এ কালফণী অনেক খুঁজি
পেয়েছে ওই একটি পুঁজি গো!
আমার চোখের জলে ওই মণিদীপ আগুন হাসির ফিনিক ফোটায়।
ব্যথা-নিশীথ
এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে।
কেন কি কথা স্মরণে রাজে?
বুকে কার হতাদর বাজে?
কোন্ ক্রন্দন হিয়া-মাঝে
ওঠে গুমরি’ ব্যর্থতাতে
আর জল ভরে আঁখি-পাতে।।
মম বর্থ জীবন-বেদনা
এই নিশীথে লুকাতে নারি,
তাই গোপনে একাকী শয়নে
শুধু নয়নে উথলে বারি।
ছিল সেদিনো এমনি নিশা,
বুকে জেগেছিল শত তৃষা
তারি ব্যর্থ নিশাস মিশা
ওই শিথিল শেফালিকাতে
আর পূরবীতে বেদনাতে।।
মনের মানুষ
ফিরনু যেদিন দ্বারে দ্বারে কেউ কি এসেছিল?
মুখের পানে চেয়ে এমন কেউ কি হেসেছিল?
অনেক তো সে ছিল বাঁশি,
অনেক হাসি, অনেক ফাঁসি,
কই কেউ কি ডেকেছিল আমায়, কেউ কি যেচেছিল?
ওগো এমন করে নয়ন-জলে কেউ কি ভেসেছিল?
তোমরা যখন সবাই গেলে হেলায় ঠেলে পায়ে,
আমার সকল সুধাটুকুন পিয়ে,
সেই তো এসে বুকে করে তুলল আপন নায়ে
আচমকা কোন্ না-চাওয়া পথ দিয়ে।
আমার যত কলঙ্কে সে
হেসে বরণ করলে এসে
আহা বুক-জুড়ানো এমন ভালো কেউ কি বেসেছিল?
ওগো জানত কে যে মনের মানুষ সবার শেষে ছিল।